জড়িত পিডিবি’র সাবেক ড্রাইভার এবাদুলের নেতৃত্বে ৫ জনের সিন্ডিকেট

চট্টগ্রাম রেলওয়ে কলোনীগুলোতে চলছে অবৈধ বিদ্যুতের জমজমাট বাণিজ্য

Passenger Voice    |    ০২:৫২ পিএম, ২০২২-১১-২১


চট্টগ্রাম রেলওয়ে কলোনীগুলোতে চলছে অবৈধ বিদ্যুতের জমজমাট বাণিজ্য

আবু মুছা জীবন ॥ চট্টগ্রামের রেলওয়ের কলোনীগুলোতে চলছে অবৈধ বিদ্যুতের জমজমাট সংযোগ বাণিজ্য। পিডিবি সাবেক ড্রাইভার এবাদুল এবং রেলওয়ের খালাসি সুজনের নেতৃত্বে জনের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে অবৈধ বিদ্যুৎ বাণিজ্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নগরীর সিআরবির গোয়াল পাড়ার তুলাতলী, টাইগারপাস মাজার গলি, মালিপাড়া, বাটালি হিলের মুখ, সিটি কর্পোরেশনের সাইনবোর্ডের পশ্চিমে গার্লস স্কুলের আগ পর্যন্ত, ঝাউতলা, পাহাড়তলি, খুলশি এলাকায় দেদারছে চলছে অবৈধ বিদ্যুতের ব্যবহার। এসব এলাকার রেলওয়ের জায়গায় রেলওয়ের কোয়াটারের পাশে গড়া উঠা অবৈধ কলোনী গুলোতে ¦লছে পিডিবি এবং রেলওয়ের অবৈধ বিদ্যুৎ। এসব কলোনীর বাসিন্দারা বিদ্যুত চোরাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদ্যুতের দুটি লাইন ব্যবহার করে থাকে। একটি রেলওয়ের অন্যটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। দুটি লাইন অবৈধভাবে সংযোগ দেওয়া আছে। বিদ্যুতের খুঁটি থেকে কৌশলে সংযোগ দিয়ে কলোনী গুলোর ভাড়া বাসায় সরবরাহ করা হচ্ছে বিদ্যুৎ।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশেষ করে টাইগারপাস মাজার গলি, মালিপাড়া, বাটালি হিলের মুখ, সিটি কর্পোরেশনের সাইনবোর্ডের পশ্চিমে গার্লস স্কুলের আগ পর্যন্ত পিডিবি সাবেক ড্রাইভার এবাদুল এবং রেলওয়ের খালাসি সুজনের নেতৃত্বে জনের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে অবৈধ বিদ্যুৎ বাণিজ্য। সিন্ডিকেট এসব এলাকার প্রতিটি বাসাবাড়ি থেকে বিদ্যুতের ব্যবহারের উপর নির্ভর করে নিম্মে ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ হাজার টাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল আদায় করে। উল্লেখিত এলাকায় প্রায় শতাধিক ঘর রয়েছে বলে এক হিসেবে দেখা যায়। অনুসন্ধানের তথ্য বলছে এসব ঘর থেকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতিমাসে প্রায় আড়াই লাখ টাকারও বেশী  আয় করেন সিন্ডিকেট।  তবে জন্য বিলের বিপরীতে কোন প্রকার রশিদ বা বিলের কপি দেয়া হয়না ব্যবহার কারীদের।

পিডিবি সুত্র জানায় পিডিবি সাবেক ড্রাইভার এবাদুলের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি মামলাও দেয়া হয়েছে। করা হয়েছে আর্থিক জরিমানাও। তবুও থেমে নেই তার এমন অবৈধ কর্মকান্ড। টাইগারপাস এলাকায় গড়ে তুলেছেন অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বাণিজ্যের বিশাল সিন্ডিকেট।

ব্যাপারে তাঁর সাথে যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বাণিজ্য সিন্ডিকেটের সদস্য শহীদুল প্রকাশ মনার সাথে মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে প্রতিবেদককে বলেন, আপনার কাছে কি ডকুমেনট আছে তা আগে দেখান। পরে অবশ্য বলেন কাজের সাথে তিনি জড়িত নন।

রেলওয়ে কর্মচারী সুজন প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেনতিনি এর সাথে জড়িত নন। তবে এবাদুলই অবৈধ বিদ্যুৎ চুরি করে বিক্রি করেন বলে জানান সুজন। অপরদিকে রতন এবং দেলোয়ারকে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

রেলওয়ের এক শ্রেনীর কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিজেদের নামে রেলওয়ের কোয়াটার বরাদ্দ নিয়ে এসব কোয়াটারের সাথে গড়ে তোলেছে অসংখ্য টিনসেট কাঁচা এবং সেমি পাকা ঘর। এসব ঘরে ভাড়ায় থাকা বাসিন্দাদের অধিকাংশই বহিরাগত। আর এসব অবৈধ ঘরগুলোতে চলছে বিদ্যুতের জমজমাট অবৈধ বাণিজ্য। এসব অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ থেকে সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে বছরে  প্রায় অর্ধকোটি টাকারও বেশী অর্থ। সূত্র জানায় বিদ্যুৎ  বিভাগ রেলওয়ের কিছু মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীর সাথে যোগসাজস করে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেট। অবৈধ এসব বিদ্যুৎ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সিন্ডিকেটের এসব সদস্যরা লাভবান হলেও বছরে প্রায় কোটি টাকার বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে সরকারী দুটি সেক্টরের। এতে করে একদিকে বিদ্যুতের যেমন অপচয় হচ্ছে তেমনি সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে। আর বছর শেষে এসব অবৈধ বিদ্যুতের ব্যবহার চলে যায় সিস্টেম লসের হিসেবের খাতায়।

বিদ্যুৎ আইনের ৩২নং ধারায় বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি বাসগৃহ বা কোনো স্থানে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ চুরি করলে অনধিক বছরের কারাদন্ড অথবা চুরিকৃত মূল্যের দ্বিগুন অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন। আইনের ব্যবহার না থাকায় এমন কঠিন আইন থাকার ফলেও কোনোভাবে বস্তির বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না।

এদিকে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযানে গিয়ে বেশ কয়েকদফা হামলার শিকার হয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগ রেলওয়ের বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, যারাই অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে থাকেন তাদেরকে নিয়েই বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন করার অভিযানে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে অবৈধ বিদ্যুত ব্যবহারকারীরা এসব হামলার ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন।

চলতি বছরের মার্চ সকালে অবৈধ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী। এদের মধ্যে সিনিয়র সাব এজিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (এসএসএই) এনায়েত উল্লাহ গুরুতর আহত হন।

এর আগে পাহাড়তলি ঝাউতলা এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন  উত্তর ঝাউতলা রেলওয়ে কলোনী সমাজকল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ। সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার কোনোভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না। অবৈধ ব্যবসায়ীরা কিশোর গ্যাং এর ছত্রছায়ায় অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবসা পরিচালনা করছে। কলোনীবাসীর পক্ষ থেকে রেলেওয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলেও জানান কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী অজয় কুমার পোদ্দার প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি সাধারণ মানুষকে অবৈধ সংযোগ ব্যবহার না করারও পরামর্শ দেন এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ অনেকাংশে কমে যাবে বলেন তিনি মন্তব্য করেন।

বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় বিতরণ বিভাগ(খুলশী) অঞ্চলের উপ সহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার মাহাতো প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, বিদ্যুতের এসব অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে তাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। বিদ্যুতের কেউ এর সাথে জড়িত থাকলে তাঁর দায় দায়িত্ব কর্তৃপক্ষ নিবেনা বলেও